SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

মানুষ ও অন্যান্য সকল সৃষ্টির শুরু আছে এবং শেষও আছে। আছে জন্ম, আছে মৃত্যু। কিন্তু ঈশ্বরের কোনো আদি এবং অন্ত নেই। তিনি ছিলেন, আছেন ও চিরকাল থাকবেন। আমরা মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার আগে ছিলাম না; এখন আছি, ভবিষ্যতে আমাদের আত্মা থাকবে কিন্তু দেহ থাকবে না। এটি একটি রহস্য। আমরা অনাদি, অনন্ত ও অসীম ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব হিসেবে এই রহস্যের অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারি না। তা ভেবেও আমরা কোনো কূল কিনারা পাই না। তাই আমরা ঈশ্বরকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করি, তাঁর উপাসনা করি। তাঁর সকল সৃষ্টি ও কাজের জন্য আমরা তাঁর প্রশংসা করি ৷

অনাদি অনন্ত ঈশ্বর সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের কথা

ঈশ্বর অনাদি ও অনন্ত। তিনি আদিতে ছিলেন, এখন আছেন ও চিরদিন থাকবেন । অনাদিকালকে অন্যকথায় বলা হয় শাশ্বতকাল । অনাদি অনন্ত ঈশ্বর আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তাঁর সঙ্গে মিলিত হতে পারি। আমরা সকলেই শাশ্বত জীবন পেয়ে ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হতে পারব যদি আমরা যীশুর কথা শুনি ও তা মেনে চলি। কারণ পুত্র ঈশ্বরকে অর্থাৎ যীশুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন পিতা ঈশ্বর । যদি আমরা যীশুর কথা মেনে চলি তবে আমরা পিতা ঈশ্বরের কথাও মেনে চলি। যীশু আরও বলেন,“আমরা যদি গভীর বিশ্বাস নিয়ে যীশুর দেহ ও রক্ত গ্রহণ করি তবে আমরা শাশ্বত জীবন লাভ করতে পারি।”যীশুর দেহ ও রক্ত গ্রহণ করার অর্থ তাঁর সকল আদেশ মেনে চলা। যদি আমরা যীশুর বাধ্য হয়ে চলি তবে শেষদিনে যীশুই আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। কারণ তিনি নিজেই পুনরুত্থান করেছেন। পুনরুত্থিত হয়ে আমরা অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত হতে পারি। যীশুর উপর বিশ্বাস রেখেছি বলে আমরা দৈহিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও যীশুর মতো করেই সেই শেষ দিনে পুনরুত্থান করব।

সাধু পল বলেন,“আমরা এখন পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরমেশ্বরের সন্তান হয়ে উঠেছি। এভাবে আমরা পবিত্র হয়েছি। তিনি চান আমরা যেন আর পাপের দাসত্বে আবদ্ধ না হই। যদি আমরা পবিত্রভাবে জীবন যাপন করি তবেই আমরা শাশ্বত জীবন পেতে পারি। অর্থাৎ আমরা অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের সাথে যুক্ত থাকতে পারি। আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, পাপের ফল হলো মৃত্যু, কিন্তু যীশুর পথে চলার ফল হলো শাশ্বত জীবন।”

ঈশ্বর অনাদি অনন্ত

অনাদি ও অনন্ত ঈশ্বরের গুণাবলি অদৃশ্য। কিন্তু আমরা তা জানতে পারি তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে। সাধু পল বলেন, “জগতের সৃষ্টিকাল থেকে তাঁর অদৃশ্য গুণাবলি–তাঁর সেই চিরস্থায়ী শক্তি ও তাঁর ঈশ্বরত্ব-সে তো মানুষের বুদ্ধিগোচর হয়েই আছে: তাঁর সৃষ্ট সবকিছুর মধ্য দিয়েই তা উপলব্ধি করা যায় (রোম ১:২০)। সমস্তকিছু হবার আগে থেকেই তিনি আছেন; সমস্তকিছু তাঁরই মধ্যে একতাবদ্ধ।”(কল ১:১৭)

উপরের কথাগুলো থেকে আমরা শাশ্বত জীবনের বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারলাম। সেই শাশ্বত জীবন ঈশ্বর নিজেই। মোশী জ্বলন্ত ঝোপের কাছে উপস্থিত হয়ে ঈশ্বরকে তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। মোশীর কাছে তিনি বলেন, “আমি সেই আমি আছি' যিনি! ইস্রায়েলীয়দের তুমি এই কথা বলবে, ‘আমি আছি যিনি, সেই তিনিই আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন!” (যাত্রা ৩:১৪)। ‘আমি আছি’ এই কথার মাধ্যমে ঈশ্বর বলতে চান যে, তিনি সবসময় আছেন। অতীতে যেমন ছিলেন, এখন আছেন ও চিরকাল তিনি থাকবেন। তিনি অনাদি, অনন্ত।

ঈশ্বর একই সময়ে সর্বত্র বিরাজমান

সামসংগীত রচয়িতা দাউদের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সর্বত্র উপস্থিতির বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দরভাবে জানতে পারি। তিনি লিখেছেন :তোমাকে এড়িয়ে গিয়ে কোথাও কি যেতে পারি আমি ? 

তোমার সামনে থেকে কোথাও কি পালাতে পারি আমি? 

স্বর্গলোকে উঠে যাই, সেখানেও রয়েছ যে তুমি;

অধোলোকে নেমে যাই, সেখানেও সামনে যে তুমি, 

যদি উড়ে চলে যাই প্রত্যুষের দিগন্ত-সীমায়, 

যদি আমি বাসা বাঁধি পশ্চিম সাগর ছেড়ে দূর উপকূলে, 

সেখানেও তোমার হাত আমাকে দেখিয়ে দেবে পথ; 

আমায় রাখবে ধরে তোমার ওই হাতখানি (সাম ১৩৯:৭-১৩)।

প্রবচন গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ঈশ্বর সবসময়ই সকলের প্রতি দৃষ্টি রাখেন : “দুর্জন-সজ্জন সকলের দিকে সর্বত্রই ঈশ্বর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন” প্রবচন ১৫:৩)। ঈশ্বর মানুষের অন্তরে প্রবেশ করেন তাঁর বাণী দিয়ে: “মনে রেখো : পরমেশ্বরের বাণী সপ্রাণ ও সক্রিয়। তা যে-কোনো দুধারী খড়গের চেয়েও তীক্ষ্ণ; তা অন্তরের সেই স্থানেও ভেদ করে গিয়ে পৌঁছায়, যেখানে প্রাণ ও আত্মা এবং গ্রন্থি ও মজ্জার ভাগবিভাগ। সেই বাণী হৃদয়ের বাসনা ও ভাবচিন্তাও বিচার করে।” (হিব্রু ৪:১২)।

ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার উপায়

একবার সমুদ্রে একটা বড় মাছের কাছে একটা ছোট মাছ এসে জিজ্ঞেস করল, “সমুদ্র কোথায়?” বড় মাছ উত্তরে বলল, “এটাই তো সমুদ্র। তুমি তো সমুদ্রেই সাঁতরাচ্ছ।” ছোট মাছটি বলল,“এটা তো কেবল পানি। এখানে তো আমি সমুদ্র দেখতে পাই না।”আমাদের বেলায়ও ঠিক তদ্রূপ। আমরা ঈশ্বরের মধ্যেই রয়েছি। তাঁর কাছ থেকে কোথাও পালাতে পারি না আমরা। অথচ তাঁকে দেখার জন্য আমাদের মধ্যে অনেক আগ্রহ। কীভাবে আমরা তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পারি? আমরা যে ঈশ্বরের মধ্যেই সর্বদা আছি সেই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়ার জন্য আমরা নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারি:

১। ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য অন্তরে আগ্রহ সর্বদা জাগ্রত রাখা 

২। যীশুর মধ্য দিয়ে পিতাকে দেখতে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। 

৩। সামসংগীত ১৩৯ নম্বর ধীরে ধীরে ও প্রার্থনাপূর্ণভাবে পাঠ করা। 

৪। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা। 

৫। পাপের পথ ছেড়ে ভালো পথে আসার জন্য বারে বারে মন পরিবর্তন করা এবং হৃদয় পবিত্র করার জন্য সবসময় সাক্রামেন্তগুলো সযত্নে গ্রহণ করা। 

৬। ঘনঘন উপাসনায় যোগ দেওয়া; উপাসনার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া ও ঈশ্বরের উপস্থিতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করা। 

৭। প্রতিদিন পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু অংশ ভক্তিসহকারে ও প্রার্থনাপূর্ণভাবে পাঠ করা ৷ কারণ বাইবেল হলো ঈশ্বরের বাণী। তাঁর বাণী পাঠ করার অর্থ তাঁর কথা শোনা। তাঁর কথা শোনার অর্থ তাঁর কাছে থাকা।

৮। যীশুর নামে অভাবী ও দীনদুঃখী মানুষের জন্য প্রতিদিন ছোট ছোট কিছু দয়ার কাজ করা। কারণ যীশু বলেছেন, তিনি ঐ তুচ্ছতম মানুষদের মাঝেই আছেন।

৯। ভক্তিসহকারে আধ্যাত্মিক গুরুদের পরামর্শ শোনা ।

 

গান করি

তুমি আমার বন্ধু যীশু তুমি মম সাথি।

কী শিখলাম

ঈশ্বর অনাদি ও অনন্ত এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান তা জানতে পেরেছি। ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার উপায়ও জানতে পেরেছি।

পরিকল্পিত কাজ

কীভাবে সর্বদা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করো ।

Content added By

শূন্যস্থান পূরণ কর:

ক) অনাদিকালকে অন্যকথায় বলা হয় ___।

খ) পরমেশ্বরকে আমরা যদি মেনে চলি তবে ___ সুখে থাকব।

গ) অনাদি ও অনন্ত ঈশ্বরের গুণাবলি ___।

ঘ) প্রতিদিন পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু অংশ ভক্তিসহকারে ও ___ পাঠ করা।

 

বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল কর:

ক) আমি তো শেষদিন তাকেক) যীশুর মধ্য দিয়ে দান করেন শাশ্বত জীবন।
খ) পাপ আনে মৃত্যু কিন্তু পরমেশ্বরখ) শাশ্বত ঈশ্বর সম্পর্কে জানতে পারি।
গ) প্রবক্তা ইসাইয়ার মধ্য দিয়েগ) তোমাদের অন্তরে বাস করেন।
ঘ) তোমরা নিশ্চয়ই জান যেঘ) পুনরুত্থিত করবই ।
 ঙ) তোমরা স্বয়ং ঈশ্বরের মন্দির।

 

সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক) অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের গুণাবলি কীভাবে জানতে পারি? 

খ) শাশ্বত জীবন কী ? 

গ) ‘আমি আছি’ একথার মাধ্যমে ঈশ্বর কী বলতে চান? 

ঘ) ঈশ্বরের উপস্থিতির বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দরভাবে কার মাধ্যমে জানতে পারি?

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক) ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার পাঁচটি উপায় লেখ । 

খ) ঈশ্বর অনাদি অনন্ত-একথার অর্থ বুঝিয়ে লেখ ।

Content added By
পরমেশ্বরকে মানতে হবে
স্বর্গদূতদের মানতে হবে
দিয়াবলকে মানতে হবে
ধার্মিকদের মানতে হবে
তীক্ষ্ম ও ধারালো
সপ্রাণ ও সক্রিয়
শক্ত ও কঠিন
তীক্ষ্ম ও সক্রিয়

Promotion